Wednesday, November 25th, 2015




ফতুল্লায় সহিংসার শিকার স্মৃতি মনি ও পায়েলের ঘটনার বিচার দাবী

 

নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষ্যে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ নারায়ণগঞ্জ এর উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসুচি পালিত হয়েছে। বুধবার সকাল ১১টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে অধিকার নারায়ণগঞ্জ এর সমন্বয়ক সাংবাদিক বিল্লাল হোসেন রবিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মসুচিতে অধিকার এর বিবৃতি পাঠ করেন অধিকারকর্মী ও শিক্ষাবিদ এম কবীর ইউ চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ধর্মগঞ্জ এলাকায় ধর্ষনের শিকার হয়ে নিহত মাদারাসা ছাত্রী স্মৃতি মনির মা তাসলিমা আক্তার ও ধর্ষণের শিকার ৩য় শ্রেণির ছাত্রী পায়েল এর মা তাসলিমা বেগম। এসময় উপস্থিত ছিলেন, স্মৃতি মনির বাবা ফোরকান মৃধা, পায়েলের বাবা আফজালসহ অনান্য স্বজন এবং অধিকারকর্মী সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ, শিক্ষক জসিম উদ্দিন, সাউদল ইসলাম, তাওফিকুল ইসলাম, সুলতানা রাজিয়া শিশির প্রমুখ।
নিহত স্মৃতি মনির মা বলেন, আমাদের অনুপস্থিতিতে ঘরে ঢুকে নির্মমভাবে আমার মেয়েকে ধর্ষণ করার পর হত্যা করেছে এলাকার বখাটে শাওন, হৃদয়, হাবিবুর রহমান মনা ও হাবিব। দুই আসামীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও শাওন ও হৃদয় এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। আসামীরা আমাদের মামলা তুলে নিতে নানাভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি। আমি আমার মেয়ের হত্যকারীদের গ্রেপ্তার এবং বিচার দাবি করছি। আসামীদেরকে যেন এমন শাস্তি দেয়া হয় যাতে আর কোন স্মৃতিমনিকে অকালে প্রান দিতে। আমি আসামীদের ফাঁসি চাই।
ধর্ষণের শিকার পায়েলের মা তাসলিমা বেগম বলেন, কতটা ভয়ঙ্করভাবে সন্ত্রাসী শুভ, মজিবুর ও সোহেল গংরা আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে জোর করে ধর্ষণ করে। তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করার পর পুলিশ তিনজনকেই গ্রেপ্তার করে। কিন্তু সম্প্রতি সোহেল জামিনে বের হয়ে প্রকাশ্যে আদালত প্রাঙ্গনে আমাকে হুমকি দেয় মামলা তুলে নেয়ার জন্য। আমার মেয়ের উপর এমন অমানসিক নির্যাতন করলো আবার বলে মামলা তুলে নিতে এ কথা বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তাসলিমা বেগম। কাদতে কাদতে তিনি আরো বলেন, মামলার আসামী মজিবর অকথ্যভাষায় তাকে গালমন্দ করেছে। এবং মজিবর বলেছে, এই মামলায় তার কিছু হবে না। প্রয়োজনে সে ৫০ লাখ টাকা খরচ করবে। মামলা তুলে নিতে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। তিনি তার মেয়েকে ধর্ষনের ঘটনায় অভিযুক্ত আসামীদের ফাঁসি দাবি করেছেন। এবং প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে যাতে দ্রুত বিচার কাজ শুরু হয়।
অধিকারের নারায়ণগঞ্জ সমন্বয়ক বিল্লাল হোসেন রবিন বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে আজ আমরা এখানে মানববন্ধন করছি। একইভাবে দেশের ৪০টি জেলায় অধিকারের কর্মীরা দিবসটি পালন করছে। তিনি বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষ্যে আজ আমরা অত্যন্ত দু:খ এবং ক্ষোভের লক্ষ্য করছি, গত ১০ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পূর্ব ধর্মগঞ্জ এলাকায় নিজ বাসায় ঢুকে এলাকার চিহ্নিত বখাটে ৪ যুবক মাদ্রাসা ছাত্রী স্মৃতিমনিকে ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যা করে। স্মৃতিমনি ধর্মগঞ্জ ইসলামিয়া আরাবিয়া দাখিল মাদরাসার ৯ম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। এই ঘটনায় স্মৃতিমনির মা তাসলিমা আক্তার বাদী হয়ে শাওন, হৃদয়, হাবিবুর রহমান মনা ও হাবিবকে আসামী করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ দুই আসামী হাবিবুর রহমান মনা ও হাবিবকে গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু প্রধান দুই আসামী শাওন ও হৃদয়কে এখনো গ্রেপ্তার করেনি। বরং আসামীরা মামলা তুলে নিতে বাদী ও তার স্বজনদের নানাভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। অপর দিকে পঞ্চবটি হরিহড় পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রণির ছাত্রী পায়েলকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে জোরপুর্বক ধর্ষণের চেষ্টা চালায় বখাটে শুভ। তার সহযোগি মজিবুর ও সোহেল ধর্ষণ চেষ্টায় সহযোগিতা করে। এই ঘটনায় পায়েলের মা তাসলিমা বাদী হয়ে শুভ, মজিবুর ও সোহেলকে আসামী করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের করে। তিন আসামীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এরমধ্যে সোহেল জামিনে বের হয়ে মামলা তুলে নিতে প্রকাশ্যে আদালতপাড়ায় হুমকি দেয়।
তিনি বলেন, এই দুটি ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকল আসামীকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আ্ইনের আওতায় এনে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে মামলা তুলে নিতে আসামীদের অব্যাহত হুমকি-ধামকিতে মামলা দুটির বাদী ও তাদের স্বজনরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। এতে আমরা বাদীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছি। আমরা এই দুটি ঘটনাসহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে নারীর প্রতি সহিংসতার সকল ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।
অধিকার এর সুপারিশ সমূহঃ
নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে দেশে প্রচলিত আইনগুলোর যথাযথ প্রয়োগের ব্যাপারে সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে;
রাজনৈতিক বিবেচনায় ধর্ষণের মামলাগুলো প্রত্যাহের করা যাবে না;
বিচার বিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে ও নারীর প্রতি সহিংসতার মামলাগুলোর দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে;
প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মাধ্যম, পাঠ্যবইসহ সর্বস্তরে দীর্ঘকালীন সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে
সহিংসতার শিকার নারী ও সাক্ষীর নিরাপত্তার জন্য সরকারকে আইন করে তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category